Home » Featured » প্রেস ক্লাবের আলোচনা: ইতিহাসের সভ্যতা বিধ্বংসী অনেক ঘটনার মূলে ছিলো ফেইক নিউজ

প্রেস ক্লাবের আলোচনা: ইতিহাসের সভ্যতা বিধ্বংসী অনেক ঘটনার মূলে ছিলো ফেইক নিউজ

লন্ডন: ভূয়া খবর বা ফেইক নিউজ নামক ব্যাধিটি সমাজে নতুন নয়, অতীতে ইতিহাসের অনেক সভ্যতা বিধ্বংসী ঘটনার জন্ম দিয়েছে এটি, এমন মন্তব্য করেছেন প্রবীন সাংবাদিক, দ্যা এশিয়ান এইজ এর এডিটর ইন চার্য ও সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সৈয়দ বদরুল আহসান। লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের এর ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’ কর্মসূচীর সহযোগিতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনায় মূল আলোচকের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের কুইনমেরী ইউনিভার্সিটি লেকচার থিয়েটারে অনুষ্ঠিত ‘টক: ফেইক নিউজ এন্ড ট্রু নিউজ’ শীর্ষক এই বিশেষ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়েরের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন।

সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের সাম্প্রতিক এ ডিজিটাল যুগে কোন খবর যেমন লুকিয়ে রাখা কঠিন, ঠিক তেমনি এর সুযোগ নিয়ে ভূয়া খবর তৈরী ও প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রিয় অস্থিরতা সৃষ্টির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। তিনি বলেন, ভূয়া খবর তৈরী বা প্রচার শুধুই যে বাংলাদেশে ঘটছে বা ঘটেছে তা নয়, এই ব্যাধিতে সারা বিশ্বই আক্রান্ত। অতীতের ইতিহাসের সভ্যতা বিধ্বংসী কিছু ঘটনার উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রবীন এই সাংবাদিক বলেন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র সৃষ্টিতে ভূয়া নিউজ মূল ভূমিকা রেখেছে, ইতিহাসে এমন অহরহ ঘটনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ভিয়েতনামী নৌবাহিনী আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ আক্রমন করেছে এমন খবরে ১৯৬৪ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বেইন্স জনসন ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনায় কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ অনুমোদন নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে মিথ্যে প্রমানিত হয়। আসলে ভিয়েতনামী নৌবাহিনীর আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ আক্রমনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

সৈয়দ আহসান বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক আক্রমন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের প্রতীক হিসেবে বাসন্তীকে উপস্থাপন, ১৯৭৪ সালে শাহ আজিজুর রহমানকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওআইসি সম্মেলনে গমন, ২০১৩ সালে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হাজারো হেফাজত কর্মী নিহত হওয়া এবং চাঁদে জামাত নেতা সাঈদীর অবয়ব দেখা, ইতিহাস সাক্ষি দেয় এ সব ঘটনাই ছিলো ভূয়া খবর বা ফেইক নিউজ। সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কর্তৃক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনকে রাজাকার আখ্যা দেয়ার তীব্র সমালোচনা করে সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যদি এমন ভূয়া তথ্য উপস্থাপন করেন তাহলে ফেইক নিউজের প্রবাহ তো আরও অবাধ হবেই। বাংলাদেশের সাংবদিকদের রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যেরও সমালোচনা করেন সৈয়দ বদরুল আহসান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে, কিন্তু দলীয় আনুগত্যের কাছে পেশাগত স্বচ্ছতা যখন লোপ পেয়ে যায় তখন ফেইক নিউজের মত ব্যাধিগুলো আরও সংক্রমিত হয়। প্রবীন এই সাংবাদিক বলেন, প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বন্দনায়ই আজকের দিনের অনেক সাংবাদিকের সব সময় চলে যায়, এটি সাংবাদিকতার জন্য শুভ নয়।

শুধু সরকারী নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা নয়, ভূয়া খবরের সাম্প্রতিক এই অবাধ প্রবাহ রোধে সাংবাদিকদের সেল্ফ সেন্সরশীপ থেকেও বেড়িয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ বদরুল আহসান। তিনি বলেন, আপনি চিন্তা করবেন একটি, অথচ প্রকাশ করবেননা এটিতো হয়না। সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আপনি যদি শুধুই চিন্তা করেন, প্রকাশ করেননা, তাহলে এই ঘটনাগুলোই রং মাখিয়ে তীলে তাল করে ফেইক নিউজ কারিগররা প্রকাশ করবে, যা সৃষ্টি করবে সামাজিক অস্থিরতা।

সৈয়দ বদরুল আহসানের মূল আলোচনার পর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন। তিনি বলেন, তথ্য আদান প্রধানের অবাধ প্রবাহ যখন বাধাগ্রস্থ হয়, তখনই সৃষ্টি হয় ফেইক নিউজ তৈরীর ক্ষেত্র। ভূয়া নিউজের এই ব্যাধি মোকাবেলায় বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতার অবাধ স্বাধীনতার উপর গুরুত্বারোপ করে লিটন বলেন, দলীয় আনুগত্য পিছনে ফেলে এ ইস্যুতে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আলোচনার শেষ পর্যায়ে অর্ডিয়েন্সের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সৈয়দ বদরুল আহসান।

News credit: সত্যবাণী

video news: