বাংলাদেশের আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এশিয়ার মোড়ল বলে খ্যাত প্রতিবেশী ভারত ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে দৌড়ঝাঁপ এবং বক্তব্য-বিবৃতি পর্যালোচনায় এমনটিই লক্ষ্য করা গেছে। ফলে এ নিয়ে ফের উদ্বিগ্ন দেশবাসী। তারা আশঙ্কা করছেন এবারের নির্বাচনেও ভারতের হস্তক্ষেপ হতে পারে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার সরাসরি নয়, ভিন্ন কৌশলে তারা হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। যদিও তারা মুখে বলছে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।২০১৪-র ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে যে দেশটি আগাগোড়া জোরালো সমর্থন জানিয়ে এসেছিল, সেটি ছিল ভারত। ওই নির্বাচনকে সফল করার লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব নির্বাচনের ঠিক আগে ঢাকা সফর পর্যন্ত করেছিলেন।এতোদিন পর্যবেক্ষকরা মনে করছিলেন, পাঁচ বছর বাদে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে ভারত কিন্তু এবার অনেকটাই নিস্পৃহ – এই নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের দিক থেকে তেমন কোনও সক্রিয়তাই চোখে পড়ছে না।
কিন্তু গত কয়েকদিনে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার তৎপরতায় জনমনে ফের সন্দেহ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।গত সোমবার হঠাৎ করেই আওয়ামী শিবিরের মহাজোটের সঙ্গী হতে যাওয়া যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রিংলা। এর আগে ১৪ নভেম্বর সচিবালয়ে মহাজোটের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এই হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সচিবালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা।
এসব বৈঠক থেকে বেরিয়ে শ্রিংলা যদিও বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন এখানকার জনগণ ও রাজনৈতিক দলের ব্যাপার। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেখে ভারত আনন্দিত।‘তারা চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা সব সময় অব্যাহত থাকুক এবং নির্ধারিত সময়ে সকলের অংশগ্রহণে ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক।’বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, সু্ষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় ভারত, তারা কখনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে না।কিন্তু তাদের কথা আশ্বস্ত হতে পারছে না দেশবাসী। ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলার সাম্প্রতিক দৌড়ঝাঁপ এবং তৎপরতায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে অনেকের মধ্যে।
এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শীর্ষ কূটনৈতিক সাংবাদিকদের একটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় যেসব কথা বলেছেন তাতে জনগণের সন্দেহ আরো ঘনিভুত হয়েছে।এদিন রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মন্তব্য করেন, জামায়াতে ইসলামের মতো কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেই।আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, কোনো রাজনৈতিক জোট জামায়াতের কোনো চিহ্নিত নেতাকে মনোনয়ন দিচ্ছে কি না- সে ব্যাপারে ভারত নজর রাখছে।তবে এ বিষয়ের ভারতের কিছু বলার নেই জানিয়ে তিনি মনে করেন, জামায়াতের নেতাকে কোনো জোট মনোনয়ন দিলে বাংলাদেশের মানুষই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে।
শ্রিংলা জানান, যে সরকারই আসুক ভারতীয় অর্থায়নের বাংলাদেশে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রয়েছে তার ধারাবাহিকতা চায় ভারত।এসময় তিনি বাংলাদেশের ও ভারতের বর্তমান সরকারের মধ্যে গত তিন বছরে ৯২টি চুক্তি সম্পন্ন হবার কথা উল্লেখ করেন।নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ের এক প্রশ্নে শ্রিংলা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে ভারত পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছিল। এবারও নির্বাচন কমিশন চাইলে ভারত পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে।চীনের সঙ্গে ভারতের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই ধারণামূলকভাবে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে ভারত-চীন প্রভাবের কথা বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এটা সত্য নয়।
এ বিষয়ে আফগানিস্তানে ভারত ও চীনের যৌথভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উদারহণ দেন।ক্ষমতাসীন দল, বিকল্পধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার বৈঠক প্রসঙ্গে শ্রিংলা স্পষ্ট করেন, এসবই ছিল তার কূটনৈতিক কর্মপরিকল্পনারই অংশবিশেষ।বৈঠকগুলো ভিন্নভাবে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের কোনো মাথা ব্যথা নেই।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই প্রথম অগ্রাধিকার দেয়।
rtnn