দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—এ বিষয়ে কোনো রকমের সন্দেহ নেই। এটাই মূল কথা।’
আজ বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অবস্থানের কথা জানান।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার সংশোধনী নিয়ে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি এ জন্য যে, একটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে একটি রিট পিটিশনের বিষয়ে কোর্টের আদেশ একেবারেই নজিরবিহীন। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনৈতিক দল নিজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, সেই গঠনতন্ত্রটা যেটা থাকে, সেটাই চূড়ান্ত। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের রুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য? আইনজীবীরা বলেছেন, এটা গ্রহণযোগ্যই না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা না করে সম্পূর্ণভাবে আদালতকে ব্যবহার করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। আপনারা দেখবেন সংবিধানে যতগুলো সংশোধনী এনেছে ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীগুলো-এসব কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আনেনি, আদালতের একটা রায় নিয়ে সংশোধন করেছে। সংসদ কিংবা কোনো রেফারেন্ডামেও জনগণ ওই সবের সিদ্ধান্ত দেয়নি।’
সরকার সবকিছু আদালতের আশ্রয় নিয়ে করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আদালতকে দিয়ে বলে যে, ওই সব গণতন্ত্র বিরোধী কাজ হয়েছে। গ্রামে কিছু দুষ্টু মোড়ল থাকে তারা প্রতিপক্ষকে কাবু করার জন্য মিথ্যা ও সাজানো মামলা করে। ক্ষমতাসীনেরাও সেটা করছে। এখন একটা পার্টির প্রধান কে হবেন, কে হবেন না, সদস্য কে হবেন, হবেন না, সেটা পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। এ জন্য আমরা মনে করছি যে, এই রিট পিটিশন এবং এটা বিএনপির বিরুদ্ধের একটা সামগ্রিক চক্রান্ত, যেটা চলছে এটা তারই একটা অংশ।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে একটা চক্রান্ত, সেই চক্রান্তের ফলে অংশ হিসেবে দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রেখেছে, সেই চক্রান্তের কারণে তারেক রহমানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই আদেশ অকার্যকর। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিবকে বাদী করা হয়েছে। অথচ মহাসচিবকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে বুঝব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলীও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে গণভবনে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়টি জোটের শরিক দলের নেতাদের অবহিত করা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো