উন্নয়নের স্বার্থে আরেকটিবার নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাকেই দলের প্রতীক দেয়া হবে তাকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দলের জনসভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের করিয়েছেন ওয়াদা।
শনিবার বিকালে বরগুনার আমতলীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী ও বরগুনা সফরে বের হন। শুরুতে পটুয়াখালীতে তিনি ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি যান বরগুনায়। সেখানে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২১টি প্রকল্পের।
ভোটের তফসিলের আগে আগে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে নির্বাচনী প্রচার চালানো হবে, সেটি আগেই অনুমেয় ছিল। হলোও তাই। শেখ হাসিনা দুই জায়গাতেই তার সরকারের আমলের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বলেন, আওয়ামী লীগই উন্নয়ন করতে পারে।
দুটি জনসভাতেই বিপুলসংখ্যক জনতা উপস্থিত হয়। আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি নিয়ে হাজির হন। নৌকার পক্ষে স্লোগানও দেয়া হয় মুহুর্মুহু।
বরগুনার জনসভায় শেখ হাসিনা সরাসরি ভোট চান নৌকা মার্কায়। বলেন, ‘আরেকটিবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তাকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। এ জন্য উপস্থিত জনতার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিও আদায় করেন তিনি। বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, যে যাকেই নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠাব, আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন যে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের মানুষ সুখী সমৃদ্ধশালী হয়ে জীবন যাপন করবে। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা যে সম্মান পেয়েছিলাম, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যা করে সে সম্মান হারিয়ে গিয়েছিল। আজকে আবার আমরা দেশের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আবার বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান আমরা ফিরে পেয়েছি। সেই সম্মান ধরে রাখতে হবে। তাই আরেকটি বার আওয়ামী লীগকে আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন।’
প্রধানমন্ত্রী বরগুনাসহ দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর বিদেশে ছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। অনেক প্রতিকূলতার অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশে ফিরে আসি। তারপর সারাদেশ ঘুরেছি। দেখেছি আমার দেশের মানুষের অবস্থা। পেটে খাবার নাই। পরনে ছিন্ন কাপড়। বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে কাপড় পরতে দেয়। কারো ঘর নেই। ঘর দিয়ে চাল দিয়ে পানি পড়ে। এমন দূরবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশে দেখেছি।’
‘আমার বাবা এদেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশের মানুষ ভালো থাকবে সুন্দর থাকবে। সেটা আমার বাবার জীবনের আকাঙ্ক্ষা। সেই জন্য আমি আমার নিজেকে উৎসর্গ করেছি বাংলার মানুষের জন্য।’
‘বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। একুশে আগস্ট ওই খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক জিয়া গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গিয়েছি। আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী হারিয়েছি এবং এটা একবার নয় কয়েকবার। ওরা কী করেছে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের দেশ করেছে। পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।’
‘তার একটাই কারণ। তারা তো স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না। মানুষের উন্নতিতে বিশ্বাস করে না। এতিমের টাকা সেই টাকাও এতিমদের না দিয়ে নিজের নামে রেখে চুরি করেছে। আর সেই এতিমের চুরির দায়ে মামলা হয়েছে। আর সেই মামলায় আজকে খালেদা জিয়া জেলে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের টাকা চুরি করলে আল্লাহও শাস্তি পায়। আর সেই শাস্তি এখন ভোগ করছে।’
বরগুনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি নিজের জন্য দোয়া চান শেখ হাসিনা। বলেন, আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।’
(ঢাকাটাইমস