বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সব ধরনের নির্বাচন থেকে দূরে রাখলেও দলটির নিবন্ধন এখনো বাতিল করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কবে বাতিল করবে তাও জানে না। বর্তমানে দলটির নিবন্ধন বাতিলের নির্দেশনার জন্য আপিল বিভাগের দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তারপর নিজস্ব ওয়েবসাইটে জামায়াত প্রশ্নে ইসির দেওয়া ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে- মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর উপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।
ওই রায়ের ভিত্তিতেই দলটিকে সব নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
আইন অনুযায়ী, কোনো দল সকল শর্ত পূরণ করলে গেজেট নোটিফিকেশন করে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন। একইভাবে নিবন্ধন বাতিল করা হলেও তার গেজেট প্রকাশ করতে হয়। সম্প্রতি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও জামায়াতের নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেনি সংস্থাটি।
ইতিমধ্যে স্থানীয় নির্বাচনে বিধিমালা সংশোধন করে জামায়াতের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ আনেনি কমিশন। আবার ২০১৭ সালে আদালতের অন্য এক আদেশে সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকেও ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দিয়েছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও জামায়াতকে এখনো নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টিও জানায়নি ইসি।
নির্বাচন কমিশার রফিকুল ইসলাম এসবের ব্যাখ্যায় বলেন, হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছেন, দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। আমরাও বিষয়টি আমলে নিয়েছি। একই সঙ্গে দলটিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রেখেছি। কিন্তু জামায়াত সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সেই রায়টি স্থগিত না হয়ে, চলমান আছে। আর এ কারণেই হাইকোর্টের নির্দেশনা আমাদের পালন করতে হচ্ছে। দলটিকে আমরা নির্বাচনের সুযোগ দিচ্ছি না। যদি সেই রায়টি স্থগিত হতো এবং আপিল বিভাগে চলমান থাকতো, তবে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো।
সাবেক এ সচিব বলেন, আমরা এখন আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় আছি। এখানে আদালত আগের রায়টি চূড়ান্তভাবে বহাল রাখলে আমরা নিবন্ধন বাতিল করে গেজেট করবো। আর রায় জামায়াতের পক্ষে গেলে তারা আবার আগের মতো নির্বাচন করতে পারবে। মূলত আইনি এ জটিলতার কারণেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটেও জামায়াত কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদান আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর ঘোষণা করা হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিগুলো এরই মধ্যে দাবি তুলেছে, জামায়াত যেন জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। এছাড়া জামায়াতের সদস্য, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা যেন স্বতন্ত্র থেকেও ভোটে দাঁড়াতে না পারেন। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি মঙ্গলবার সিইসির কাছে এমন দাবি তুলে ধরলে সিইসি তাদের বলেছেন- এজন্য দেশে প্রয়োজনীয় আইন নেই।